অন্তর্বর্তী অবস্থান
ট্রানজিট বা অন্তর্বর্তী অবস্থানে যাওয়া বা আসার বিষয়টি নেই। ট্রানজিট ভ্রান্ত ধারনার জন্ম দেয় যে অন্তর্বর্তী অবস্থান অতীতকে ভবিষ্যতের সাথে যুক্ত করে।এটি বর্তমানকে প্রলম্বিত করে যা থেকে মানুষ স্থান-চ্যূতির সুড়ঙ্গে আটকে থাকে।কিন্তু ট্রানজিট/অন্তর্বর্তী অবস্থান নিজস্ব বিশেষ সীমান্ত কৌশল আর গতিবিধির নিয়মের বাইরে নয়।তা সত্বেও এটি রাষ্ট্র ও প্রগতির রৈখিক সময় থেকে ইতিহাসকে এগিয়ে নিতে পারে।এই অন্তর্বর্তী অবস্থানের অভিঘাত বর্তমান রাজনীতির সম্ভাবনাকে বহু গুণে বাড়িয়ে দেয়।
শ্রম
শ্রম মানে শুধু কাজ নয়। এটি সেই বিষয়কেন্দ্রিক বোধের নাম যা রাষ্ট্র এবং পুঁজির আধিপত্যের অধীনে। শ্রম জীবন্ত; তাই শক্তি,অস্থিরতা এবং চলাচলের দ্বারাই এর প্রাণবন্ততা প্রকাশ পায়। সব সময় এটি দেহ আর উপলব্ধিগত সম্পর্কের মধ্যে অন্তস্থ অবস্থায় থাকে।কিন্তু একই সাথে এটি বিমূর্তিকরণ প্রক্রিয়ার অধীনে যা এটিকে সময়ের মাপকাঠিতে সংক্ষিপ্ত করতে চায়। বিমূর্ত এবং জীবন্ত শ্রম-এর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব রাজনৈতিক সংগ্রাম দ্বারা গঠিত।এই দ্বন্দ্ব শুধুমাত্র মানুষের দেহ আর আত্মাকেই অতিক্রম করে না, বরং পৃথিবীর বহুমাত্রিক পরিসরের ক্ষেত্রকে আকৃতি দেয়।
চক্র
দেহ এবং মেধার চলাচলেই গঠিত হয়েছে আজকের রাজনৈতিক ক্ষেত্র।চক্র সব ক্ষেত্রে যেখান থেকে শুরু হয়েছে সেখানে ফেরত আসেনা।নিয়ন্ত্রণ আর স্বাধীনতার প্রযুক্তি হিসেবে এই চক্র শ্রম,জীবন,অর্থ,এবং বস্তুর চলাচল কে অব্যাহত রাখে।‘সঞ্চালন প্রতিটি ছিদ্র থেকে অর্থ ঝরায়’(মার্ক্স)।খোলামেলা মনোভাব এবং অনন্ত স্বাধীনতার পক্ষের প্রগতিপন্থী শ্রেণীর বিপরীতে শ্রম-চক্র বিস্ফোরক সম্ভাবনাময় প্রতিরোধের সূচনা করতে পারে।যখন সময়কে দখল করে নেয় নতুন সঞ্চয় পদ্ধতির যুক্তি, তখন রাজনৈতিক দায় এসে পড়ে বিদ্যমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে এড়িয়ে গিয়ে নতুন সংক্ষিপ্ত পথ খোঁজার।
অঞ্চলসমূহ
বর্তমান সময়ে বোধ আর সংস্কৃতি অঞ্চলের পরিসরে অবস্থান করে।সমবায়ী জ্ঞান উত্পাদনের বিধি দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হোক,কিংবা জাতীয় নেটওয়ার্ক আর বাণিজ্যিক জ়োটের অন্তর্গত থাকুক, অ্ঞ্চল হচ্ছে আসলে একই সাথে অনমনীয় সভ্যতার নির্মাণ এবং বাজার আর রাষ্ট্রের সাময়ীক সংগঠন।অঞ্চলগুলোর মাঝে রয়েছে অভ্যন্তরীণ প্রভেদ যা স্বভাবতই একীকরণের যুক্তিকে অস্বীকার করে।. ভাষিক,সাময়ীক আর আঞ্চলিক সীমান্ত অব্দি প্রসারিত অঞ্চলের পদচিন্হ স্থানান্তরিত হয় সংস্কৃতি আর বোধের পুনরাবৃত্তি,সংক্ষিপ্তি আর চলমানতায়।
সীমানা
সীমান্তের ধারনা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সামাজিক, প্রায়োগিক আর রাজনৈতিক চর্চার মাধ্যমে।প্রতিটি সীমান্তের দুটি দিক আছেঃ সংযোগ আর বিভাজন।এই দ্বন্দ্বই অন্তর্বর্তী-শ্রমের অবস্থান কে স্পষ্ট করে তোলে।সীমান্ত-বিহীন বিশ্বের অলীক পুরাণ থেকে বহুদূরে, বিশ্বায়নের চারিত্র্য হল সীমান্তের-ই বিস্তার।শুধুমাত্র অঞ্চলের সীমারেখাকে চিহ্নিত করার মধ্যেই তার ভূমিকা আর সীমাবদ্ধ নয়, বরং সীমান্ত এখন সংস্থাপিত হয়েছে ‘রাজনৈতিক পরিসরের মাঝখানে’ (বালিবার)।এগুলো একটি বিশ্লেষণাত্মক নির্দেশনা সরবরাহ করে যা দিয়ে বিভিন্ন ভৌগোলিক মাপকাঠিতে,সংবেদী নথিপত্রে এবং প্রাতিষ্ঠানিক প্রেক্ষাপটে প্রাপ্ত শ্রম ও পুঁজির পরিবর্তনকে অনুসন্ধান করা যায়।
মঞ্চসমূহ
প্ল্যাটফর্ম বা মঞ্চ সংগঠিত করে। এটি শরীর আর মেধাকে সম্পর্কিত হবার সুযোগ করে দেয়। যদিও মঞ্চের দরকার রয়েছে বহুল-বন্টিত ডিজিটাল যোগাযোগ কাঠামোর আর অনুবাদের, তথাপি অফ-লাইন বিশ্বের সাথে যুক্ত থাকাটাও অত্যন্ত জরুরি। নেটওয়ার্ক সংস্কৃতিতে মঞ্চ এক ধরনের কৌশলগত যুক্তিকে আনে যা অন্য অর্থে স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা অভিমুখী।সহযোগী সাংগঠনিক চর্চার এক ধরনের উদ্ভাবনী ক্ষমতা আছে যা নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আবিষ্কার করতে পারে। যখন স্থান-কাল ব্যপী চক্রাকারে তা বৃদ্ধি পায়, তখন মঞ্চগুলিই পারে আপাত সম্পর্কহীন ঘটনাগুলোকে অভিজ্ঞতা আর নিরীক্ষার বৃত্তাপথে সংযুক্ত করতে।মঞ্চের কাজ হল একই সাথে ধারনাকে নিরীক্ষা করা আর নতুন ধারনার জন্ম দেয়া। ব্যাখ্যা এবং বিন্যাসের সাংগঠনিক পদ্ধতি হিসেবে মঞ্চগুলো অনিশ্চয়তা আর গতিবিধি নিয়ে আলোচনা করে।
রসদ সরবরাহ,পরিবহন ও ব্যবস্থাপনা
প্রতিষ্ঠানের রসদ ব্যবস্থা পদ্ধতি সামসময়িক উত্পাদন ও গতিবিধির প্রবণতার প্রসঙ্গে প্রযোজ্য। সমাজের ক্রমোদ্ভূত বিন্যাস, সেই সাথে সেগুলোর ইঙ্গিতবাহী প্রযুক্তি আর শ্রমব্যবস্থাকে বুঝতে গেলে বিশ্ব-রসদ শিল্প হল মূল চাবিকাঠি।রসদ ব্যবস্থার প্রধান দায়িত্ব হল যোগাযোগ-ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তি,বস্তু বা রসদ এর চলাচল,পরিবহন এবং অর্থনৈতিক দক্ষতা।রসদ ব্যবস্থার কেন্দ্রে রয়েছে পরিচালনাপদ্ধতি সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা ও সুযোগ —যা শ্রমে নিয়োজিত ব্যক্তির আর বস্তু বা রসদ বিষয়ে আচরনের সাথে সংশ্লিষ্ট।যখন এই প্রসঙ্গটিতে যুক্ত হয় সীমান্তের ক্রমবৃদ্ধিমানতা,আত্মমাত্রিকতার তথ্যায়ন, এবং সংস্কৃতির পুঁজিবাদীকরণ, তখন বহুজাতিক বিশ্বে রসদ ব্যবস্থার পরিচালন পদ্ধতি আরো বৃহত্তর নিহিত অর্থ বহন করে।
অর্গনেট/সংগঠিত নেটওয়ার্ক
অর্গনেট বা সংগঠিত নেটওয়ার্ক-কে সবচেয়ে ভালভাবে বোঝা সম্ভব নতুন প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো হিসেবে, যে গুলোর সামাজিক-কারিগরী সক্রিয়তা আসলে নেট ওয়ার্ক সংস্কৃতির মধ্যেই অন্তর্নিহিত।অর্গনেটগুলো অংশত নিয়ন্ত্রিত হয় সংকট থেকে এবং অনেক ক্ষেত্রেই তা ঘটে আধুনিকতার প্রাথমিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যর্থতার কারণে(ইউনিয়ন,ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান, বিশ্বাবিদ্যালয়সমূহ,রাষ্ট্র ), যাতে সম্প্রচার-উত্তর যুগের ডিজিটাল সংস্কৃতি আর সমাজের আলোকে সাম্প্রতিক সামাজিক,রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটগুলোকে সম্বোধন করা যায়। এগুলোর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হল চর্চার খোলামেলা প্রকৃতি,আদান-প্রদান এবং প্রকল্প ভিত্তিক কার্যকলাপের কাঠামো। নেটওয়ার্কগুলো সংগঠিত হয়ে থাকে দুর্বল সামাজিক বন্ধনের এবং অংশগ্রহণকারীদের ক্ষণস্থায়ী সম্পর্ক-প্রবণ অনলাইন পরিবেশের অভিজ্ঞতায়,পরিচালনা পদ্ধতির চ্যালেন্জ ও টিঁকে থাকার সঙ্কটের প্রতিক্রিয়া হিসেবে।
Translation (English > Bengali) Meher Nigar